স্টাফ রিপোর্টার,ঢাকা:রমজানকে সামনে রেখে বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আসছে রমজানে ৩৯টি টিম রাজধানী ঢাকার বাজার মনিটরিং করবে। এছাড়াও পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা; রমজানে চাহিদা বৃদ্ধি পায় এমন পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড় এবং ১১টি পণ্য আমদানিতে বাকিতে এলসি খোলার সুযোগ। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর দেড় লাখ টনের বেশি ছোলার প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে প্রায় এক লাখ টন রমজানে চাহিদা থাকে। দেশের স্থানীয় উৎপাদন খুবই কম, তাই আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। খেজুরের চাহিদাও রমজানে বাড়ে, প্রতিবছর ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ টন খেজুর আমদানি হয়, যার অর্ধেক রমজানে লাগে। এ ছাড়া, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা সাড়ে ৩ লাখ টন এবং চিনির চাহিদা ৩ লাখ টন বেড়ে যায়। দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দফায় সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। এর মধ্যে রমজান মাসের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রোজায় নানা পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ে। এ কারণে সরকার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা যায় এবং মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা রাখতে পারে। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, রমজানকে সামনে রেখে বাজার ব্যবস্থাকে সহনশীল রাখার জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালাবে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে রমজান মাসে চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে সঠিক সমতা বজায় রাখা যায়। জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হবে। এ লক্ষ্যে সরকার চাল, ডাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও ছোলা আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। বেসরকারি খাতের জন্য এসব পণ্যসহ আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বাড়া ১১ ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে বিলম্বে বিল পরিশোধের অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে এসব খাদ্যপণ্য এখন বাকিতে আমদানি করা যাবে, যা দ্রব্যের দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এই ১১ পণ্য হচ্ছে- চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর। এসব পণ্যের জন্য ৯০ দিন পর্যন্ত ব্যাংকের বিল পরিশোধ করা যাবে। এ ছাড়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, তেল, চিনি ও খেজুরের আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছে সরকার। এর ফলে এনবিআর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, পেঁয়াজ, আলু, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্কছাড় দেওয়ায় প্রায় ১৭শ কোটি টাকা এবং ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর কারণে ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে। যদিও নীতি সুদহার বাড়ানো, এলসি সহজ করতে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং শুল্কছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তবুও বেসরকারি খাত উৎসাহিত হচ্ছে না। তবে সরকার আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধানে কাজ করছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সহায়তা প্রদান করছে।এদিকে, চাল আমদানির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে এনবিআর। এর ফলে চালের দাম প্রায় ৯ টাকা ৬০ পয়সা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং আলু আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও তুলে নেওয়া হয়েছে।