আমার সোনার দেশ
ডিজিটাল : ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নজিরবিহীন পতনের পর থেকেই বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে জোট সঙ্গীরা। জোটপ্রধান আওয়ামী লীগের পলায়নে মনোবল ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে শরিক দলগুলোর। রাজনীতিতে তাদের এখন আর আগের মতো দাপটও নেই, কার্যক্রমও নেই, নেই কোনো ব্যস্ততা। আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে চলা শরিকদলগুলোর বেশির ভাগই রাজনৈতিক কার্যালয় পর্যন্ত খুলছে না, দুই-একটা দল কার্যালয় খুললেও অনেকটা অনিয়মিত। জোটপ্রধান না থাকায় এখন আওয়ামী লীগ জোটে চলছে ভাটার টান। ফলে রাজনীতিতে আপাতত নিশ্চুপ থাকার বিকল্প দেখছে না জোটসঙ্গীরা। তা ছাড়া জোটের কার্যকারিতা না থাকায় সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে থাকা জোটসঙ্গী দলগুলোর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ জোটে থাকতে অনীহা কাজ করছে বলে জোটের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে। জোটের শরিকদলগুলোর নেতারা মনে করছেন, জোটের প্রত্যেক দলের নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ আছে। যদিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট গঠন হয়েছিল সেই ২০০৪ সালে। এরপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জাপা, তরিকত ফেডারেশন অন্যতম। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছিল জোটপ্রধান। তাদের কথামতোই সবই চলত। তারাই সরকারের সুযোগ-সুবিধাভোগী। এ দেশে যত লুটপাট, গুম, খুন, বিরোধী দল দমনসহ অন্যান্য যেসব অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই করেছে। শরিকদলগুলো শুধু জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনের সময় সক্রিয় ছিল। নেতারা আরো মনে করেন, জোটপ্রধান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের পলায়নের পর থেকে তাদের আর রাজনীতি নেই। সেই সাথে জোটের কার্যকারিতাও হারিয়ে গেছে। এখন যে যার মতো চুপচাপ দল গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করছে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আইভি আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে একটি বিষয়ে কলহ হয়। এরপর থেকে যত মিটিং হয়েছে কোনো মিটিংয়ে আমরা উপস্থিত হইনি। শেখ হাসিনাও ডেকেছেন আমরা যাইনি। আমরা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রাখিনি। তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্টের পরে আমরা রাজনৈতিক কার্যালয় খুলেছি কিন্তু সেটা অনিয়মিত। জোটের কার্যক্রমও এখন নাই। ভবিষ্যতে যদি আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসে আর আমাদের ডাকে তাহলে পরিস্থিতি ও সময় বলে দেবে আমরা কী করব। ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুক বলেন, আমরা একটি ছোট দল, আগেও আমরা আওয়ামী লীগ জোটে নামকাওয়াস্তে ছিলাম। জোটে না থাকলে আমাদের দলের নিবন্ধনই বাতিল হয়ে যেত। ৫ আগস্টের পর থেকেতো আমরা আওয়ামী লীগের সাথে নাই। ভবিষ্যতেও থাকব না। সাম্যবাদী দলের সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেলেও এ প্রসঙ্গে কথা হয় জাসদের দফতর সম্পাদক মো: সাজ্জাদ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই আমরা নিয়মিত অফিস খুলছি। নেতাকর্মীরা অফিসে আসছেন। তবে আপাতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নাই। তিনি বলেন, আমাদের এখন কাজ হলো আমাদের দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন, আইনগতভাবে তাকে সহায়তা করা এবং জেল থেকে সভাপতিকে মুক্ত করা। আওয়ামী লীগ জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি, গণ আজাদী লীগ, বাসদ, মজদুর পার্টির একাধিক নেতার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা: ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোট দল, কার্যক্রম সীমিত। এখন আর তেমন রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, সব সময় গুম খুন হত্যার বিপক্ষে ছিলাম। সব সময় জোটের মিটিংয়ে বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেখ হাসিনা কারো কথায় শোনেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ জোটের আরেক শরিক গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা কৌশলে ১৪ দলের কোমর একেবারে ভেঙে দিয়েছেন। ১৪ দল ভেঙে এখন ২৮ দলে পরিণত হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে জোটের কোনো দলই রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছে না। নিজেদের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। ফলে কেউই এখন আর আওয়ামী লীগ জোট নিয়ে ভাবছে না। প্রত্যেকেই তাদের দলকে কিভাবে ফাংশন করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে ন্যাপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ জোটের কার্যকারিতা আসলে নেই। জোট প্রধান দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে গোপনে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
যে প্রেক্ষাপটে
আওয়ামী
লীগের
সাথে
জোট
হয়েছিল
৫
আগস্টের
পর
সেই
প্রেক্ষাপটের
কোনো
কার্যকারিতা
একেবারে
নেই।
জোটপ্রধান
আওয়ামী
লীগ
ছাড়া
আসলে
জোটের
কার্যক্রমইতো
থাকে
না। ২০০৪
সালের
২১
আগস্ট
রাজধানীর
বঙ্গবন্ধু
অ্যাভিনিউতে
আওয়ামী
লীগের
সমাবেশে
গ্রেনেড
হামলার
পর
বিরোধীদলীয়
অন্য
রাজনৈতিক
দলগুলোকে
নিয়ে
২৩
দফার
ভিত্তিতে
১৪
দলীয়
জোটের
যাত্রা
শুরু
হয়।
প্রথমে
আওয়ামী
লীগ,
জাতীয়
সমাজতান্ত্রিক
দল
(জাসদ),
ন্যাশনাল
আওয়ামী
পার্টি
(ন্যাপ)
ও
১১
দল
মিলে
জোট
গঠিত
হয়।
তবে
জোট
গঠনের
পরপরই
১১
দল
ভেঙে
বাংলাদেশের
কমিউনিস্ট
পার্টি
(সিপিবি),
বাংলাদেশের
সমাজতান্ত্রিক
দলসহ
(বাসদ)
কয়েকটি
দল
বেরিয়ে
যায়।
রয়ে
যায়
ওয়ার্কার্স
পার্টি
ও
গণফোরামসহ
কয়েকটি
দল।
তবুও
জোটটি
১৪
দল
নামেই
পরিচিত।
২০০৭
সালের
জোট
থেকে
ড.
কামাল
হোসেনের
নেতৃত্বাধীন
গণফোরাম
বেরিয়ে
যায়।
পরের
বছর
২০০৮
সালে
জাতীয়
নির্বাচনের
আগে
আনোয়ার
হোসেন
মঞ্জুর
নেতৃত্বাধীন
জাতীয়
পার্টি
(জেপি)
ও
নজিবুল
বশর
মাইজভাণ্ডারীর
নেতৃত্বাধীন
তরিকত
ফেডারেশন
জোটে
যোগ
দেয়।
২০১৩
সালে
ও
২০১৯
সালে
জাতীয়
পার্টি
(জাপা)
জোট
ত্যাগ
করে।
২০১৬
সালে
ইনুর
জাসদ
বিভক্ত
হয়ে
গেলে
বাদল-আম্বিয়া
নেতৃত্বাধীন
বাংলাদেশ
জাসদ
জোট
ত্যাগ
করে।
এখন
সাম্যবাদী
দল,
বাসদ-রেজাউর, গণতান্ত্রিক
মজদুর
পার্টি,
গণআজাদী
লীগসহ
১৪
দলীয়
জোটে
আছে
১২টি
দল।