আমার সোনার দেশ ডিজিটাল:গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসের আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠান হয়। যেখানে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিবর্তে তার প্রতিনিধি হিসেবে কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। জাইমা রহমান লন্ডন থেকে এবং মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান।রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ স্রেফ একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও তাতে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বিশ্বনেতারা অংশগ্রহণ করে থাকেন। স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেখানে উপস্থিত থাকেন। সুতরাং বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে এমন একটি অনুষ্ঠানে জাইমা রহমানের অংশগ্রহণ করা নিশ্চয়ই তাৎপর্যপূর্ণ।এমন প্রেক্ষাপটে ধারণা করা যায়, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগে রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে ধাতস্থ করার জন্য ঐতিহ্যবাহী এই প্রাতরাশ অনুষ্ঠানে তাকে পাঠানো হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে রাজনীতির প্রাথমিক সিঁড়িতে পা রেখেছেন তিনি।তবে জাইমা রহমানের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি এখনো কৌতূহলের পর্যায়েই রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টা এখনো কৌতূহল পর্যায়েই আছে। কারণ, জাইমা রহমানের রাজনীতিতে আসা নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি কিংবা জাইমা রহমান নিজেও বলেননি তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। তবে জাইমা রহমানের যোগ্যতা-কার্যক্রম যদি দলের জন্য উপকারী হয়, দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে অবস্থায় জিয়া পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে ভবিষ্যতে তার দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার, দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ আছে। এটা দোষের কিছু না। কারণ, ভারতীয় উপমহাদেশে পারিবারিক রাজনীতির ঐতিহ্য রয়েছে।তিনি আরও বলেন, অবশ্য আন্তর্জাতিক একটা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে জাইমা রহমান রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন, এমনটা বলা যাবে না। হয়তো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যস্ততার কারণে তার প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ অংশ নিয়েছেন জাইমা রহমান। তবে বিএনপি যে জাইমাকে প্রতিনিধিত্ব করতে সুযোগ দিয়েছে, সেটা তার জন্য নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। দলে তরুণদের প্রতিনিধি হিসেবে উনি সেখানে যেতেই পারেন। তা ছাড়া বিএনপিতেও তরুণ নেতৃত্ব আসছে। সে দিক থেকে জাইমার অংশগ্রহণ একটা ভালো বিবেচনার বিষয় হয়েছে। কেননা, তরুণরা কীভাবে ভাবছে, কী ভাবছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আর বিএনপিও যে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছে, জাইমার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সেটাও প্রমাণিত হয়েছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, এ ধরনের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় এটা ইঙ্গিত দেয়, জাইমা রহমান রাজনীতিতে আসছেন। কারণ, আমাদের দেশে পারিবারিক ধারায় রাজনীতিতে আসাটাই স্বাভাবিক। এটা বিএনপির জন্য এক ধরনের বার্তা।এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ জাইমা রহমানের অংশগ্রহণে উচ্ছ্বসিত বিএনপির তরুণ নেতারা বলছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। জিয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে জাইমা রহমানের ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ যোগ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ এবং যুবসমাজ আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। তিনি কালবেলাকে বলেন, ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তার মেয়ে জাইমা রহমান। আন্তর্জাতিক ওই অনুষ্ঠানে তিনি শুধু বাবার প্রতিনিধিত্বই করেননি, দেশের সব তরুণ সমাজেরও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের।বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের আগামী দিনের কান্ডারি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ সেই তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমান তার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের ও সম্মানের। জাইমা রহমানের বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ঘটনাকে রাজনীতিতে নতুন বার্তা বলে মনে করেন তিনি।ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালে সপরিবারে লন্ডন যান তারেক রহমান। এর ফলে ছোটবেলা থেকে লন্ডনেই পড়াশোনা করেছেন জাইমা রহমান। বিশ্বখ্যাত লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন তিনি। পড়াশোনা করার সময় রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি তাকে। তবে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ঢাকার ছাত্র সমন্বয়কারীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যে বৈঠক করেন, সে সময় জাইমা রহমান তার সঙ্গে ছিলেন বলে জানা যায়।