আমার সোনার দেশ ডিজিটাল : ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলের প্রধানসহ অনেক শীর্ষ নেতাই দেশের বাইরে; দেশে যারা, আছেন আত্মগোপনে; দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঝুলেছে ডজন ডজন মামলা, গ্রেপ্তার হলেই রিমান্ড; ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্রলীগ এখন ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠন। সব কিছু মিলিয়ে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগ মাঠের রাজনীতিতে ফেরার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা শেষমেশ কতটা মাঠে গড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাদের কর্মসূচি ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক শক্তিও। ছয় মাসের ‘নিরবতা’ ভেঙে মাঠের রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ বলছে, নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এতদিন ‘চুপ’ ছিল। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনে তারা মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দেয় গত মঙ্গলবার; দলের ফেইসবুক পেইজে। সেখানে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকারের পদত্যাগসহ ১০টি দাবির কথা বলা হয়। এসব দাবিতে ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ ধরনের কর্মসূচি দিয়েছি দলটি। ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি আছে প্রচারপত্র বিলি; ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ; ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ; ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রয়েছে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের ডাক। তবে সমাবেশের ঘোষণা থাকলেও তা কোথায় এবং কখন হবে, তা জানায়নি আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা কেবল না, ‘গণহত্যার’ দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করেছিল মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে করতে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা কেবল না, ‘গণহত্যার’ দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করেছিল মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে করতে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, “আমরা মূলত সময়টা নিয়েছিলাম নেতাকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টা বিবেচনা করে; অনেক ক্ষতি হয়েছে, আর যেন না হয়।” অন্তর্র্বতী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা আর কতদিন হাত-পা গুটিয়ে থাকব? একের পর এক হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন; নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে যাচ্ছে। আমাদের তো ঘুরে দাঁড়াতে হবে। “এই অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে।” সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তারা আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেবে না। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড হল বাংলাদেশের ইতিহাসে। আপনার-আমার চোখের সামনে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করা হল; শত শত ছেলে অন্ধ হয়ে গেল। “বাংলাদেশে যতদিন না তারা ক্ষমা চাচ্ছে, যতদিন না তাদের লিডারশিপকে ট্রায়ালের (বিচার) মধ্যে আনা হচ্ছে, যতদিন না তারা সাবমিটেড টু জাস্টিস, যতদিন না তারা অ্যাকাউন্টেবিলিটির মধ্যে আসছে। ততদিন তাদের প্রটেস্ট করতে দেওয়া হবে না। তাদের আগে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।” বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে বলে মনে করেন না সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় তথ্য ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ছাত্ররাও বলেছে- আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে যে ফ্যাসিজম করেছে, জুলাইয়ে যে গণহত্যা চালিয়েছে, তারপর আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার অধিকার নাই। “আওয়ামী লীগ ব্যানারে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ নাই, সেটা আমরা মনে করি।” গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একদল মানুষ। জেলায় জেলায় একই ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একদল মানুষ। জেলায় জেলায় একই ঘটনা ঘটেছে। প্রায় দেড় দশক সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ গেল নভেম্বরেও কর্মসূচি দিয়েছিল, কিন্তু শেষমেশ তাদের সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার বিশ্বাস, দেশের মানুষ নিজেদের দাবি আদায়ের স্বার্থেই এবারের কর্মসূচিতে সামিল হবেন। দলটির ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম টেলিফোনে বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজিরবিহীন অবনতিসহ নানা কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। “এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায়। দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা এই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।” তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশের গণমানুষের দল। জনগণের স্বার্থে, জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এই কর্মসূচি। সাধারণ মানুষই আমাদের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করবেন।” এর আগে ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু কর্মসূচি প্রতিহত করতে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বর এবং দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের অবস্থান নেয় বিএনপি, তাদের সহযোগী সংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। প্রতিহত করার ঘোষণার মধ্যে সেদিন মতিঝিল, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও নগরভবন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে নিজেদের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই কয়েকজন পিটুনির শিকার হন। আওয়ামী লীগের এবারের কর্মসূচি ঘিরে শঙ্কার কোনো কারণ দেখছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “দিস ইজ দ্য ওয়ার্ল্ড অব মিডিয়া। এই যুগে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রাম আসছে। আপনারা দেখছেন আমরা সেইসব প্রোগ্রাম মোকাবেলা করছি।” তিনি বলেন, “ভিডিও বার্তা, মিডিয়ার জগৎ- প্রোগ্রাম দিতেই পারে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অনেক নেতাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তারা যদি এরকম কোনো অ্যাটেম্প্ট নেয়, অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে আপাতত আমরা এমন কোনো শঙ্কা দেখছি না।”