সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রাতিষ্ঠানিক মদদ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রচারে শামিল হয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। রাজ্যসভায় এক বক্তব্যে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে পরিককল্পিত হামলা চালিয়েছে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির উগ্র সদস্যরা। পুড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের পতাকা। তারা হুমকি দিচ্ছে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের। ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমর্থিত। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং শিবসেনার মতো উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংস্থাগুলোই এখন ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায়। এসব সংগঠন সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়িয়ে পার পেয়ে যায় নির্বিঘ্নে। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে অধিক এবং ভয়াবহ দাঙ্গা প্রবণ রাষ্ট্র। ভারতে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে ভারতের বড় কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে ১৯৬১ সালে জবলপুরে, ’৬৯ সালে গুজরাটে, ’৮৪ সালে পাঞ্জাবে শিখ হত্যা, ’৮৯ সালে ভাগলপুরে এবং কাস্মীরে, গুজরাটের গধরায় ট্রেন পুড়িয়ে ২০০২ সালের দাঙ্গা, ২০১৩ সালে মুজাফ্ফর নগর ও ২০২০ সালে দিল্লীর দাঙ্গা অন্যতম। এসব দাঙ্গায় নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। ভারতে অন্যান্য ধর্মের উপসনালয় গুড়িয়ে দিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মদদে। অস্পৃশ্যতার কারণে নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা দেশটিতে চরমভাবে ঘৃণিত ও বৈষম্যের শিকার। মোট জনসংখ্যা একতৃতীয়াংশ ভারতীয় দারিদ্রসীমার নীচে যাপন করছে মানবেতর জীবন। তারপরও ভারত থেমে নেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির উস্কানি দেয়া থেকে। অপরদিকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যন্য নজির সৃষ্টি করেছে বিশ্বে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ঘটেনি কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের এহেন গভীর ষড়যন্ত্রের সাথে হাত মিলিয়েছে ফেরারি ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ভারত, বাংলাদেশ ও তার জনগণ নয় সম্পর্ক রাখতে চায় বিশেষ ব্যক্তি ও দলের সাথে। এসব ঘটনা উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইতোমধ্যেই একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে ভারত। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতিভূ বাংলাদেশের জনগণ পা দেয়নি ভারতীয় চক্রান্তের ফাঁদে।
দিল্লীর সংসদ ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র
ভারত সম্প্রতি নতুন করে শুরু করেছে পুরনো খেলা। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ভারতের অংশ দাবি করছে দেশটির কতিপয় সংবাদমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এনিয়ে চালানো হচ্ছে অপপ্রচার। বাংলাদেশের এই অঞ্চলটি দ্রুত দখলে নিতে উস্কানি দিচ্ছে সরকারকে। ভারতের আধিপত্যবাদী রোগ অনেক পুরনো। ১৯৪৭ সালে ভারত মানতে পারেনি মুসলিম অধ্যুষিত স্বাধীন পাকিস্তানের অস্থিত্ব। অখণ্ড বাংলা ভাগের ঘটনাটিও ঘটে তৎকালীন নেতাদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও। এখনো তারা বিশ্বাসী অখণ্ড ভারতে। দিল্লীতে ২০২৩ সালের জুনে উন্মুক্ত করা হয়েছে নতুন সংসদ ভবন। যেখানে রাখা হয়েছে ‘অখণ্ড ভারত’এর একটি মানচিত্র। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ প্রতিবেশী সব দেশকে দেখানো হয়েছে তাতে। ‘অখণ্ড ভারত’ ধারণাটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শগত চিন্তার ফসল। তাদের মতে ভারত হলো প্রাচীন সাংস্কৃতিক ভারতবর্ষ। একটি দেশের সংসদ ভবনে প্রতিবেশী দেশগুলোর মানচিত্র রাখা নিশ্চিতভাবেই একটা ভুল বার্তা দিয়েছে তাদেরকে। হিন্দুত্ববাদের পরিচ্ছেদে আরব সাগরের নাম বলা হয়েছে সিন্ধু সাগর। আর বঙ্গোপসাগরকে গঙ্গাসাগর। ভারতকে একটা হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরারই প্রচেষ্টা চলছে এসবের মধ্যে দিয়ে।বাংলাদেশ চায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে পারস্পরিক মর্যাদা সম্পন্ন সুসম্পর্ক। ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের প্রতি হতে হবে শ্রদ্ধাশীল। সরে আসতে হবে আধিপত্যবাদী মনোভাব থেকে। প্রতিবেশী সম্পর্কে আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট তার “মেনডিঙ ওয়াল” বইয়ে লিখেছেন-“গুড ফেনসেস মেইক গুড নেইবারস।” বাংলাদেশ এমন উদারনীতিতে বিশ্বাসী হলেও ভারত বাংলাদেশের গোটা সীমান্তকে ঘিরে ফেলেছে কাঁটাতারের ফেনস বা বেড়া দিয়ে।
নিউজউইক ম্যাগাজিন- ভারতের মানচিত্রে বাংলাদেশ
আমেরিকার প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন নিউজউইক ১৯৮৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের নির্বাচন নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপায়। নিউজউইক এর প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘এন্ড অফ এ ডাইনেস্টি’। ভারতের রাজনীতি ও নির্বাচনে কংগ্রেস এবং নেহেরু পরিবারের পতনকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয় প্রতিবেদনটি। '৮৯ সালের ২২ থেকে ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভারতের ৯ম লোকসভা নির্বাচনে চরম ভরাডুবি ঘটে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের। ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে ২০৭ আসনে হেরে যায় কংগ্রেস। লোকসভার দু’টি নির্বাচনের ফলাফল এবং কংগ্রেসের বিপর্যয়ের বিষয়টি তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করে নিউজউইক ম্যাগাজিন। প্রতিবেদনটির দু’টো মানচিত্রেই বাংলাদেশকে দেখানো হয় ভারতের অংশ হিসেবে। প্রতিবেদনটি পড়ে আমি খুব মর্মাহত হই। নিউজউইক কীভাবে এমন একটি বড় ভুল করতে পারে স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে। এই সময়টায় আমি লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী বেনগাজীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সাড়ে তিন দশক আগে নিউজউইক এর প্রতিবেদনটি দেখে পরদিনই কড়া প্রতিবাদ পাঠাই নিউইয়র্কে, নিউজউইক সম্পাদক বরাবর। প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি, ১৯৯০, এশিয়া প্যাসিফিক এডিশনে ভুল সংশোধনী প্রকাশ করে নিউজউইক। আমার নিকট পর পর দু’টি চিঠি পাঠায়। এরপরও আমার কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। চিঠির কপি দু’টো এখনও আছে।
বাংলাদেশিরা কেন ভারতের অংশ হবে?
বিজয়ের ৫৪তম দিবস উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দেশ। এখনও বিতর্ক চলছে বাংলাদেশের উপর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রভাব এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী’র মতো এমন মন্তব্য করেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন। এমন মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচনা হয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম রাষ্ট্র। লাখো মানুষের আত্মত্যাগ ও