ডেস্ক রির্পোট,আমার সোনার দেশ : বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে। কলকাতা থেকে বিবিসি সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানান, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। এ সময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। এই বিষয়ে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি কার্যকরী সদস্য বিকে রয় জানিয়েছেন, ডেপুটেশন দেয়ার সময় বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে তা তারা দেখেননি এবং তারা ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও কাউকে অফিসের ভেতরে দেখতে পাননি। ঘটনার খবর পেয়ে ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের অফিসটি ঘুরে দেখেন এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে কথাবার্তা বলেন। তবে এ বিষয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেনি। একই ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের কোচবিহারেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা পাশের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। এই কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিল সীমান্ত এলাকায়। এদিকে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্টাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এটি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ দেয়ার ঘোষণাও দেন তারা। সূত্র : বিবিসি
এদিকে আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে হামলা ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির সমর্থকদের হামলার ঘটনা বাংলাদেশ সরকারকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। সেখানে নানা ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করছে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে মিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে আগ্রাসনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আজ সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে আজ সোমবার ভোরে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির বিক্ষোভকারীদের একটি বড় দলের হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাপ্ত ঘটনাপ্রবাহ চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে, বিক্ষোভকারীদের পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে আগ্রাসনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে সম্পত্তির ক্ষতি করে। পরিতাপের বিষয়, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ছিলেন না। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলতে চায়, বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অপবিত্রতা একটি নৈমিত্তিক উদাহরণ হয়ে উঠেছে। গত ২৮ নভেম্বর কলকাতাও একই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছে। আগরতলায় এই বিশেষ কাজটি কূটনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা সনদের লঙ্ঘন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কূটনৈতিক মিশনগুলোকে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা স্বাগতিক দেশের সরকারের দায়িত্ব। তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনাটি মোকাবিলায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ, কূটনীতিক ও অ-কূটনৈতিক সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে
।