• ঢাকা
  • মঙ্গলবার , ১৭ জুন ২০২৫ , সকাল ০৬:২৭
  • ৩ আষাঢ়, ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
হোম / জাতীয়

ঋণ করে ঘি খেয়ে লিটনের অপ্রয়োজনীয় বাহারি লাইটের ঘানি টানছে রাসিক

রিপোর্টার : amarsonardesh.com
ঋণ করে ঘি খেয়ে লিটনের অপ্রয়োজনীয়  বাহারি লাইটের ঘানি টানছে রাসিক ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ

স্টাফ রির্পোটার,ঢাকা : ঋণ করে ঘি খাওয়ার- নীতিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) পরিচালনা করেছেন সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আওয়ামী লীগ আমলে ফ্যাস্টিট কায়দায় এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন সবকিছু। উন্নয়নের জোয়ার দেখাতে অপ্রয়োজনীয় স্ট্রিট লাইটে খরচ করেছেন শত কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের অবস্থা না থাকলেও তা আমলে নেননি। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে যাওয়া লিটনের সেই বিলাসী লাইটের ঘানি এখন টানতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে। প্রশ্ন উঠেছে, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বিদ্যুৎ ও জনগণের অর্থ অপচয়ের আদৌ প্রয়োজন ছিল কী? এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও বিল সাশ্রয়ে অর্ধেক লাইট অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাসিক কর্তৃপক্ষ। গ্রিন ও ক্লিন সিটির পর আলোর নগরী হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহী। সন্ধ্যা নামতেই শহরের প্রধান সড়কগুলো আলোকিত হয় দৃষ্টিনন্দন বাতিতে। লাইটগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে- রাজমুকুট ও প্রজাপতি। ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড ও চীন থেকে নিয়ে আসা নানা ডিজাইনের লাইটগুলো জ্বলে উঠতেই নগরীর সৌন্দর্য রূপ নেয় অন্য আলোয়। মুগ্ধ করে যে কাউকেই। রাসিক সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর কল্পনা মোড় থেকে তালাইমারী চৌরাস্তা পর্যন্ত ডাবল লেনে উন্নীত সড়কটির দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। ২০২২ সালে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি প্রশস্ত করা হলে রাসিক সড়ক দ্বীপে ১৫ মিটার পর পর ১৩০টি বাতির খুঁটি স্থাপন করা হয়। প্রতিটি খুঁটিতে ১৩টি করে রাজকীয় বাতি লাগানো হয়। সড়ক ঘেঁষে দক্ষিণ পার্শ্বে বাঁধের ওপর দেওয়া হয় আরও ১৮০টি গার্ডেন লাইট। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। সন্ধ্যা হলেই আলোর ছটায় ঝলমল করে গোটা সড়ক। এর সৌন্দর্য প্রশংসিত হলেও ব্যয়বহুল এসব বাতির ব্যবহার নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। তা ছাড়া বাতিগুলো ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় প্রকৃতি ও জীবপ্রজাতির স্বাভাবিকতায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে পরিবেশবিদদের পক্ষ থেকে। এদিকে রাজমুকুটের আদলে তৈরি সড়কবাতি রয়েছে নগরীর আরও প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে। এর বাইরেও নগরীর প্রতিটি প্রধান প্রধান সড়কে রয়েছে ব্যয়বহুল বাতি। নগরীর ১৭টি মোড় ও চত্বরে রয়েছে ১৮টি সুউচ্চ হাইমাস্ট পোল ও ফ্লাড লাইট। স্বল্প দূরত্বে পোল স্থাপনে বিদ্যুৎ খরচ অনেক গুণ বেড়েছে এমন দাবি অনেকের। অন্যদিকে ২০২২ সালে নগরীর আলিফ লাম মিম ভাটার মোড় হতে বিহাস পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭৯৩ কিলোমিটার ফোর লেন সংযোগ সড়কও দৃষ্টিনন্দন বাতিতে আলোকিত করা হয়েছে। এ সড়কে ২৮৫টি ডেকোরেটিভ পোলে বসানো হয়েছে ৫৩০টি অত্যাধুনিক এলইডি বাল্ব। এতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ও নেভে। এর আগে ২০২০ সালে মহানগরীর মনিচত্বর, বড়কুঠি, লালন শাহ পার্ক, কোর্ট স্টেশন, আম চত্বর, আলিফ লাম মিম ভাটার মোড়সহ ১৬টি মোড়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইমাস্ট পোলে লাইট বসানো হয়। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিন্দুর মোড়ে প্রথম দুটি হাইমাস্ট পোলের লাইট উদ্বোধন করেন মেয়র লিটন। আবার নগরীর পশ্চিমের প্রবেশপথ কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বিলসিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কে বসানো হয়েছে ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন পোল। প্রতিটি পোলে প্রজাপতি দুই ডানায় রয়েছে দুটি করে এলইডি বাল্ব। দৃষ্টিনন্দন ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এ বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন-অফ হবে। কেবল সড়কের এ আলোকায়নেই রাসিকের খরচ হয়েছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর রেলগেট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে লাগানো হয়েছে ব্যয়বহুল ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎভোগী সড়কবাতি। এভাবে ২০১৮ সালে মেয়র হওয়ার পর লিটন কেবল আলোকায়নের নামে শত কোটি টাকা খরচ করেছেন। এসব বিলাসী লাইট এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাসিকের। এতে প্রতি মাসে গড়ে বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ বিলের বোঝা টানতে পারছে না করপোরেশন। ফলে মাসের পর মাস বকেয়া থাকছে। বিলের বিষয়ে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি-নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন ৭-৮ বছর থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। এতে বকেয়া বেড়েই চলেছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের কাছে পাওনা ৪৩ কোটি টাকার ওপরে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ওই সময় সাবেক মেয়রকে (লিটন) বলেছিলাম, বিদ্যুতের কোটি কোটি টাকা বিল বাড়ছে। আলোকায়নে আরেকটু হিসাব করে এগোতে হবে। বিদ্যুৎ বিল তো দিতে হবে। তখন মেয়র বলেছেন, সামর্থ্য কোথায়! তখন বলেছিলাম, প্রতি মাসে বিল ৫০ লাখ টাকা করে দেব। তাতে দেখলাম, আমি ৫০ লাখ দেওয়ার পর পরই নতুন মাসের বিল চলে আসছে। এতে বকেয়া আবার বেড়ে যায়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, বিকল্প লাইন করে দিতে। এক খুঁটি বাদ দিয়ে পরেরটা জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে আলোর কোনো ঘাটতি হয়নি। বরং, মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিল কমেছে। অচিরেই মাঝের বাদ দেওয়া খুঁটিগুলো অন্য সড়কে বসানো হবে, যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লাইট না থাকে।



Bangladesh

আরও পড়ুন