• ঢাকা
  • শনিবার , ১৪ জুন ২০২৫ , রাত ০১:২৩
  • ৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
হোম / জাতীয়

দ্রুত ফুরাচ্ছে গ্যাসের মজুত

রিপোর্টার : amarsonardesh.com
দ্রুত ফুরাচ্ছে গ্যাসের মজুত ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ


ডেস্ক রির্পোট,আমার সোনার দেশ :দ্রুত ফুরাচ্ছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন। বর্তমানে যে মজুত আছে, তাতে আগামী সাত বছরের কিছু বেশি সময় চলবে। গত ১৫ বছরে ভোলা ছাড়া আর কোনো বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভোলায় গ্যাসের বড় মজুত থাকলেও পাইপলাইন না থাকার কারণে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করা যাচ্ছে না। যদিও সরকার ভোলার গ্যাস মূল খণ্ডে আনতে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে এই পাইপলাইন নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে অনুসন্ধান কূপ, উন্নয়ন কূপ ও কূপ সংস্কারের মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা করছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নতুন বড় গ্যাসের মজুত না পেলে ২০৩১ সালের পর আমদানি করা গ্যাস (এলএনজি) দিয়ে চলতে হবে। এতে সংকটও বাড়বে। এজন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার কথা বলছেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। (সূত্র-কালবেলা)। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। এ ছাড়া চারটি ক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত পাওয়া গেলেও উত্তোলন করা হচ্ছে না। আর পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন নানা কারণে বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরে সাধারণত এক টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উত্তোলন করা হয়। চলতি বছরের সর্বশেষ মজুতের হিসাব এখনো করা হয়নি। তবে গত বছরের হিসাব অনুযায়ী উত্তোলনযোগ্য মজুত ছিল ৮ দশমিক ৪৬ টিসিএফ। বছরে এক টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়—এমন হিসাবে বর্তমানে মজুত আছে সাত দশমিক ৪৬ টিসিএফ। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, একশ কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাহাড়েও শিগগির দরপত্র আহ্বান করা হবে। তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে, এটা সত্য। এজন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম দ্রুত করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনে ধীরগতি আমাদের একটু পিছিয়ে দিচ্ছে। পেট্রোবাংলার সর্বশেষ ২০২৩ সালের গ্যাসের মজুত প্রতিবেদন অনুযায়ী, উৎপাদন অব্যাহত থাকা ২০টি গ্যাসক্ষেত্রের মজুত ৭ হাজার ১২৫ বিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের বর্তমান মজুত ১ হাজার ৮০ বিরিয়ন ঘনফুট, হবিগজ্ঞ গ্যাসক্ষেত্রের মজুত ৭২ বিলিয়ন ঘনফুট, বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের মজুত ৩৪৫ বিলিয়ন ঘনফুট, কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ১ হাজার ৯৯৭ বিলিয়ন ঘনফুট, রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে ১ হাজার ৭৩৩ বিলিয়ন ঘনফুট, সিলেট হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে ৯৬ বিলিয়ন ঘনফুট, মেঘনা গ্যাসক্ষেত্রে ১৯ বিলিয়ন ঘনফুট, নরসিংদী গ্যাসক্ষেত্রে ৩৩ বিলিয়ন ঘনফুট, বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে ৮৬ বিলিয়ন ঘনফুট, ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে ২০৭ বিলিয়ন ঘনফুট, সালদানদী গ্যাসক্ষেত্রে ১৮২ বিলিয়ন ঘনফুট, শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে ৫০০ বিলিয়ন ঘনফুট, সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রে ৩০৩ বিলিয়ন ঘনফুট, সুন্দলপুর (শাহবাজপুর) গ্যাসক্ষেত্রে ১১ বিলিয়ন ঘনফুট, শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্রে ২২ বিলিয়ন ঘনফুট, বেগমগজ্ঞ গ্যাসক্ষেত্রে ৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট, মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে ৮১ বিলিয়ন ঘনফুট, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে ১৩৪ বিলিয়ন ঘনফুট, বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রে ১৬৭ বিলিয়ন ঘনফুট এবং জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে নতুন করে মজুত পর্যালোচনার কাজ চলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মজুত থাকার পরও নানা কারণে কিছু ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে না। এর মধ্যে কুতুবদিয়া গ্যাসক্ষেত্রে ৪৬ বিলিয়ন ঘনফুট, ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রের মজুত ৪৩৫ বিলিয়ন ঘনফুট, জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে ৫৩ বিলিয়ন ঘনফুট, ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে ১৪০ বিলিয়ন ঘনফুট। ভোলা নর্থ ও ইলিশার গ্যাস তোলা হচ্ছে না, কারণ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার মতো পাইপলাইন নেই। এ ছাড়া কুতুবদিয়া ও জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে ফের গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আরও পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে মজুত থাকার পরও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে রূপগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে মজুত রয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ঘনফুট। এই গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের সঙ্গে পানি ওঠায় উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমান মজুতের পরিমাণ ৪৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে কানাডিয়ান বহুজাতিক কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে চলা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখন কোনো কাজ হচ্ছে না। কামতা গ্যাসক্ষেত্রের বর্তমান মজুত ২৯ বিলিয়ন ঘনফুট। এখানেও গ্যাসের সঙ্গে পানি ওঠায় বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফেনী গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমান মজুত ৬৩ বিলিয়ন ঘনফুট। এই গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের সঙ্গে পানি ওঠায় বন্ধ করা হয়েছে উৎপাদন এবং সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের বর্তমান মজুত ৯০ বিলিয়ন ঘনফুট। অগবীর সমুদ্রে থাকা এই গ্যাসক্ষেত্রটিতে গ্যাসের মজুত থাকলেও অর্থনৈতিক বিবেচনায় লাভজনক না হওয়ায় এখানে কোনো কাজ করা হচ্ছে না। জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি হচ্ছে যে কোনো দেশের লাইফলাইন। এখানে সংকট হলে দেশের সব জায়গায় সংকট হবে। দেশীয় গ্যাসের মজুত কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চাইতেও আমদানির দিকে ঝুঁকেছিল বেশি। এখন আমাদের উচিত হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুসন্ধান কার্যক্রম দ্রুততর করা। না হলে ভবিষ্যতে আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর করতে হবে। এতে রিজার্ভের ওপর, অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হবে।





Bangladesh

আরও পড়ুন