রংপুর
জেলা প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকা ক্ষমতায় আছে বলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমার সংসার। বাবা, ভাই ও বোনের স্নেহ আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আমি বাবার মতো জীবন দিতে প্রস্তুত। বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রি প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত কারও বই কিনতে হয় না। আওয়ামী লীগ সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। যাতে পড়াশোনায় মনযোগী হয়। প্রত্যেক উপজেলায় আমরা একটি করে সরকারি স্কুল ও কলেজ করে দিয়েছি। এখন একটি করে কারিগরি স্কুল করে দিচ্ছি। বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রবাসী ব্যাংক করেছি। জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ যেতে হবে না। যুবসমাজ যেন চাকরি ও কাজ পায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে। অনেকেই ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি। খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে কাজ হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় না এলে কাজ হয় না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে হতদরিদ্র নেই। মাত্র ৫ শতাংশ। আল্লাহর রহমতে সেটাও থাকবে না। এখন আর জীর্ণ কাপড় পরতে হয় না। বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে পরতে হয় না। প্রত্যেক মানুষের আজকে কাপড় কেনার আর্থিক সচ্ছলতা এসে গেছে। যে একবেলা খাবার পেতো আজকে তার তিনবেলা খাবারের সুযোগ হয়ে গেছে। সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, করে যাবো। আপনারা অনেক দূর থেকে এসেছেন। অনেকেই মাঠেও ঢুকতে পারেননি, হয়তো চোখের দেখায় দেখতে পাচ্ছি না- কিন্তু আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। আমি হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারি।’উদ্বোধন হলো দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র তিস্তা সোলার লিমিটেড। রংপুর জিলা স্কুল মাঠের সমাবেশ থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বেক্সিমকো পাওয়ার নির্মিত ২০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অনাবাদি চরের সাড়ে ৬০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় ও এশিয়ার অন্যতম বড় সৌর বিদ্যুতকেন্দ্র। তিস্তা সোলার লিমিটেড নামে এই কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছে বেক্সিমকোর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড। তিস্তা পাড়ের লাটশালা এলাকায় বিশাল এই কেন্দ্রটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালে। বসানো হয় সাড়ে পাঁচ লাখ সোলার প্যানেল। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সুন্দরগঞ্জের তিস্তা পাড় থেকে রংপুর পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ১২২টি টাওয়ারের ১৩২ কিলো ভোল্টের ৩৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। নির্মাণ করা হয়েছে সাবস্টেশন, বসানো হয়েছে ইনভার্টারসহ সব ধরনের যন্ত্র। বন্যা, নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রক্ষায় নির্মাণ করা হয়েছে বাঁধ ও চলাচলের জন্য সাত কিলোমিটার সড়ক। যার সুবিধা পাচ্ছেন স্থানীয়রা। রংপুর সফরে এসে উত্তরের মানুষে জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে উৎপাদিত বিদ্যুৎ। এ কেন্দ্র থেকে দিনে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। প্রকল্পটি নিয়ে বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান শায়ান এফ রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা রোডম্যাপ আছে গেদ্বাবাল ওয়ার্মিং নিয়ে, পরিবেশ রক্ষা নিয়ে। সরকার এটা নিয়ে অনেক কাজ করছে। বেক্সিমকো অনেক খাতে পাইওনিয়ার। আমরা মনে করি, এই রিনিউয়াবল এনার্জি সেক্টর ভবিষ্যৎ জ্বালানির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাই আমরা এ খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেই।’ প্রকল্পটি শতভাগ বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের মালিকানায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পে অর্থায়নে আমরা দেশে প্রথম সুকুক বন্ড চালু করি। এ প্রকল্পে আমাদের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আরও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চিন্তা করছি। এই প্রকল্প উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতেও ভূমিকা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও অবদান রাখবে বলে মনে করেন শায়ান এফ রহমান। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জ্বালানি আমদানি কমাতে সরকারও এ খাতে জোর দিয়েছে। যার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বেক্সিমকো। উত্তরবঙ্গে আরও একটি সৌর বিদ্যুতকেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে দেশের শীর্ষ এই শিল্পগ্রুপ।