• ঢাকা
  • শনিবার , ১৪ জুন ২০২৫ , রাত ০১:০৬
  • ৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
হোম / আইন-বিচার

মাগুরার শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি, কর্তৃপক্ষ বলছে অবস্থা 'ক্রিটিক্যাল'

রিপোর্টার : amarsonardesh.com
মাগুরার শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি, কর্তৃপক্ষ বলছে অবস্থা 'ক্রিটিক্যাল' ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ

আমার সোনার দেশ ডিজিটাল : যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া মাগুরার শিশুটির শারীরিক অবস্থা 'ক্রিটিক্যাল' বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান। শিশুটির চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় আনার পর শুক্রবার রাত থেকে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে।

ওদিকে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিরাজুল ইসলাম  বলেছেন, শিশুটিকে নিপীড়নের ঘটনার সাথে যারা জড়িত বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের চারজনকেই পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। শনিবার বিকালে শিশুটির মা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, ভগ্নিপতির ভাই, তার বাবা ও মা- চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

হাসপাতালে শিশুটির কাছে থাকা তার একজন মামা বেলা এগারটা নাগাদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, শিশুটি এখনো আগের মতোই অচেতন অবস্থাতেই রয়েছে। শিশুটিকে নিপীড়নের প্রতিবাদে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শুক্রবারই সড়ক অবরোধ ও থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। আগামীকাল রোববার আবার বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নারী ও শিশুদের নিয়ে হেনস্থা ও নিপীড়নের বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যেই মাগুরার এই শিশুটির নিপীড়নের ঘটনা ঘটলো। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বেলা বারটার দিকে শিশুটির শারীরিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, "অবস্থা ভেরি ক্রিটিক্যাল। তার গলার আঘাত খুবই মারাত্মক। তার যৌনাঙ্গেও আঘাত রয়েছে। গত রাত ৯টার দিকে মেয়েটিকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা"।

তিনি জানান, শিশুটির চিকিৎসার জন্য পেডিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, এ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি ডিপার্টমেন্ট মিলে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং এই বোর্ড ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে।

ঘটনা সম্পর্কে কী জানা গেছে

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনার পর শিশুটির পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে যে চারজনকে আটক করা হয়েছে তার মধ্যে শিশুটির বোনের স্বামী ও শ্বশুরও রয়েছে। পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কয়েকদিন আগে শিশুটি মাগুরা শহরে তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে বোনের কাছে এসেছিলো বেড়ানোর জন্য। বৃহস্পতিবার বেলা এগারটার কিছুক্ষণ পর শিশুকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক নারী। পরে জানা যায় ওই নারী তার বোনের শাশুড়ি। এরপর খবর পেয়ে শিশুটির মাও হাসপাতালে আসেন।


হাসপাতালে চিকিৎসরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শিশুটির গলায় দাগ ও শরীরে বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় দেখতে পান। চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে শিশুটির যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়েছে। অবস্থা ভালো নয় দেখে তখনি মাগুরা হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শে শিশুটিকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যেই ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিশুটির নিপীড়নের অভিযোগ করে এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বহু মানুষ।

ঘটনার প্রতিবাদে ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার থানায় বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। এ সময় মাগুরা সদরে মহাসড়ক অবরোধ ও থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন তারা। থানার মূল ফটক ঘেরাও করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন। এর আগে জুমার নামাজ শেষে শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে জমায়েত হয়ে শিশু নির্যাতনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে মিছিল বের হয়। এক পর্যায়ে তারা শহরের ভায়না চত্বর বা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বেলা তিনটার দিকে থানার গেইটে গিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিরাজুল ইসলাম বলছেন, তরুণরা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

"পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়েছে। শিশুটির সাথে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা যাওয়ায় মামলায় কিছুটা বিলম্ব হলেও অভিযুক্তদের দ্রুতই হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশের যা যা করণীয় সবই করা হচ্ছে," বলছিলেন তিনি। শনিবার বিকালে চারজনকে আসামি করে মামলা করেছেন শিশুটির মা।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং তাকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করবে পুলিশ। শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর শিশুটিকে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হলে গত রাত নয়টার দিক থেকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া শুরু হয়। শিশুটির মামা দুপুর নাগাদ জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা আগের মতোই আছে অর্থাৎ এখনো জ্ঞান ফিরেনি।


গত দুই মাসের শিশু নির্যাতনের কিছু তথ্য

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বা এমএসএফ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী,এ বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে ধর্ষণের যে ৪২টি ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ৯টিই ছিলো শিশু ধর্ষণ। আর ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৭টি, যার মধ্যে শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনা ছিলো ১৬টি। এই সংগঠনটির মতে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা দৃশ্যমান হয়নি। ফলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ঘটেছে, যা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে আরও বলা হয় , "ফেব্রুয়ারিতে একটি শিশুর ধর্ষণের চেষ্টার ও এক কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনা সমাজপতিরা আপস করেছেন, যা প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করে বেআইনিভাবে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে"।


Bangladesh

আরও পড়ুন