• ঢাকা
  • রবিবার , ১৫ জুন ২০২৫ , সন্ধ্যা ০৬:৩৩
  • ১ আষাঢ়, ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
হোম / আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্ত,নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

রিপোর্টার : amarsonardesh.com
ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্ত,নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ

আমার সোনার দেশ ডিজিটাল : গাজা উপত্যকায় নতুন যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলের রাস্তায় নেমে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক বিক্ষোভ করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী সরকারের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। এছাড়া ২০২৩ সালে ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ৭ অক্টোবরের ওই হামলা আঁচ করতে ব্যর্থতার জন্য ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রধান রনেন বারকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

সূত্রের খবর, বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু সরকার দেশের গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জেরুজালেম ও তেল আবিব থেকে পুলিশ কমপক্ষে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আয়োজকেরা বলছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচি যেভাবে গতি পাচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে।

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে এ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তবে গাজায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরালো হয়ে ওঠে। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে সম্প্রতি আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় এখনো হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ৫৯ জনের পরিণতি নিয়ে ভাবছে না। ধারণা করা হচ্ছে, জিম্মিদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন। ব্রাদার্স ইন আর্মস আন্দোলনের প্রধান নির্বাহী ইতান হার্জেল বলেন, ‘এই সরকার এখন নিজেকে রক্ষা করার জন্য, ইসরায়েলের জনসাধারণকে বিরক্ত করবে, এমন বিষয়গুলো থেকে নজর অন্যদিকে সরানোর জন্য আবারও যুদ্ধ শুরু করেছে। সরকার সম্ভাব্য সব পর্যায়ে সব ধরনের বৈধতা হারিয়েছে। তারা ব্যর্থ হচ্ছে।’ গত বুধবার হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমের মধ্যাঞ্চলে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল পতাকা এবং গাজায় এখনো জিম্মি থাকা মানুষদের সমর্থনে লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। অনেকে ড্রাম বাজাচ্ছিলেন এবং স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন।’ ( সূত্র-দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসি)।

বিক্ষোভের আয়োজকদের একজন ওরা নাকাশ পেলেড। তিনি নৌবাহিনীর সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি হাইফা শহরের নিকটবর্তী একটি এলাকা থেকে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। জেরুজালেমের উপকণ্ঠে তাঁবুর ভেতর অন্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তিনি রাত কাটিয়েছেন। পরে পায়ে হেঁটে শহরটির ভেতর ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে বিক্ষোভ করেন। নাকাশ পেলেড বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছি। আমাদের সংগঠিত হতে হবে, আমাদের অবিচল থাকতে হবে, আমাদের মূল লক্ষ্যে নিবদ্ধ থাকতে হবে। (বিক্ষোভ) সহিংস হওয়া যেমন ঠিক নয়, তেমনি এটিকে ভদ্রোচিতও রাখা যায় না।’

বিক্ষোভকারীরা জোরালো কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ইসরায়েল তুরস্ক নয়, ইসরায়েল ইরান নয়।’ নেতানিয়াহুর নেওয়া বেশ কিছু সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে ইসরায়েলি গণতন্ত্রের জন্য ‘লাল পতাকা’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এর একটি হলো, বারকে বরখাস্ত করার তৎপরতা। আরেকটি হলো, অ্যাটর্নি জেনারেল গ্যালি বাহারাভ মিয়ারাকে বরখাস্ত করার তৎপরতা। মিয়ারা যুক্তি দেখিয়েছেন, বারকে তাঁর পদ থেকে উৎখাত করা হলে তা অবৈধ হতে পারে।

ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের আইনবিশেষজ্ঞ আমির ফুচস বলেন,‘সরকারের বারকে বরখাস্ত করার এখতিয়ার আছে। তবে এরপরও প্রশাসনিক আইন মেনে চলতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়, তবে সুপ্রিম কোর্ট এটাকে আটকাতে পারে।’

জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিন বেতের বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার ইসরায়েলি পুলিশ ‘কাতারগেট’ মামলায় নতুন সন্দেহভাজনদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এদিকে চলমান দুর্নীতির বিচার শেষে নেতানিয়াহুরও কারাদণ্ড হতে পারে। ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন সপ্তাহে দুবার করে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।


ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্ত 

২০২৩ সালে ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ৭ অক্টোবরের ওই হামলা আঁচ করতে ব্যর্থতার জন্য ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রধান রনেন বারকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বিবিসির খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলি মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রনেন বারকে আগাম বরখাস্ত করার অনুমোদন দেয়। তিনি ২০২১ সালের অক্টোবরে পাঁচ বছরের জন্য এই পদে নিয়োগ পান। এক ভিডিওবার্তায় নেতানিয়াহু রনেন বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, সময়ের সঙ্গে অবিশ্বাস বাড়ায় তিনি রনেন বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং জেরুজালেমে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও উত্তাল হয়। গাজায় নতুন করে হামলার বিরোধিতা করা অনেকে বিক্ষোভে যোগ দেন। এদিকে গত মঙ্গলবার থেকে ইসরাইল গাজায় তাদের ভাষায় ‘হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা’ লক্ষ্য করে তুমুল হামলা শুরু করেছে, যা দুই মাস ধরে কোনোমতে চলা একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত ইতিও ঘটিয়েছে।  শিন বেট ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এবং গাজায় যুদ্ধে এটি অন্যতম নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এর কার্যক্রম ও সদস্যপদ রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকে এ বরখাস্তের ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়েছেন। নেতানিয়াহুবিরোধী খ্যাত ইসরাইলের অ্যাটর্নি জেনারেলও শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্তের ঘটনার সমালোচনা করেছেন। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিলো বলে দাবি তেল আবিবের। ওই ঘটনার পর ইসরাইল গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ১৫ মাসের ইসরাইলি হামলায় ৪৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।



Bangladesh

আরও পড়ুন