আমার সোনার দেশ ডিজিটাল : দালাল চক্রের মাধ্যম সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে ‘গোপন আস্তানায়’ জিন্মি থাকা এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দালাল চক্রের সদস্যদের নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে পরিবার। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহতের স্ত্রী ছফুরা খাতুন। এর আগে সকালে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ডেইলপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। নিহত রহমত উল্লাহ (৩৫) রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়ার মৃত মোহাম্মদ কাশিমের ছেলে।
জানা যায়, রহমত উল্লাহসহ একই চক্রের মাধ্যমে তারা ১১ জন মালয়েশিয়ার যাওয়ার কথা ছিল। এ ঘটনার পর তাদের ১১ যুবকের মধ্যে ৯ জন ফিরে আসলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে অপর একজন।
ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে একই এলাকার নাজির হোসেনের ছেলে নবী আলম (২০)। নিহতের স্ত্রী ছফুরা খাতুন বলেন, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রহমত উল্লাহসহ রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়ার ১১ জন বাসিন্দা স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়ার যেতে ঘর থেকে বের হন। ঘর থেকে রওনা দেওয়ার সময় স্বামী তার হাতে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইলফোন নম্বর দেন। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যার দিকে ওই ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সংযোগ পাননি। সেই থেকে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি বলেন, আমার স্বামীর সাথে মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেওয়া অন্যদের স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারি, তারা টেকনাফের সমুদ্র উপকূলের পাহাড়ে দালাল চক্রের সদস্যদের হেফাজতে রয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে তাদের সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে তুলে দেওয়া হবে। তবে বাড়ি থেকে রওনা দেওয়ার পর থেকে স্বামীর সঙ্গে কোন ধরণের যোগাযোগ করা সম্ভব হইনি।
ভূক্তভোগী এ নারী বলেন, গতকাল সকালে তাদের এলাকা থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেওয়া একজনের স্বজন সাইফুল ইসলামকে জনৈক ব্যক্তি ফোনে জানায় দালাল চক্রের হাতে জিম্মি কয়েকজনকে টেকনাফের পাহাড়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদেরকে নির্যাতনের পর পাহাড়ি এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই খবরের ভিত্তিতে সাইফুল ইসলাম টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ডেইলপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে আহত অবস্থায় রহমত উল্লাহ’র সন্ধান পেলেও অন্যদের খোঁজ মেলেনি।
ছফুরা খাতুন জানান, পরে জানতে পারেন তাদের এলাকার মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশ রওনা দেওয়া ১১ জনের মধ্যে ৯ জন দালালদের গোপন আস্তানা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তার স্বামী রহমত উল্লাহকে আহত অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে ঘটনার ব্যাপারে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন অবগত নন উল্লেখ করে বলেন, বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াছ খান বলেন, টেকনাফ থেকে আহত এক ব্যক্তিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। কিন্তু কারা, কি কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। নিহতের শরীরের মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ময়নাতদন্তের পর মৃত্যু কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।